Tuesday, December 23, 2014

সৈয়দ মাইনুল হোসেন ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ






মানুষের জন্মই হয় মৃত্যুর জন্য। কিন্তু এই অঘোম মৃত্যুও অনেককে অমর করে রাখে তাঁর কর্মের জন্য। সৃষ্টিশীল কর্মের ফলে স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকে দেশ তথা জাতির কাছে। তেমনি এক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়:
সৈয়দ মাইনুল হোসেন ১৯৫১ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিকুলেশন/এস,এস,সি পরীক্ষার আগে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকদের ভুলের কারণে তাঁর সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ লেখা হয় ৮ মে ১৯৫২। পত্র-পত্রিকায় ভুল করে লেখা হয় ৫ মে ১৯৫২। পৈত্রিক নিবাস মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ির দামপাড়া গ্রাম। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মুজিবুল হক এবং মাতা রাশিদা হক। পিতা চৌমুহনী সরকারি এস, এ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটান। এর আগে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, যশোর শিক্ষাবোর্ডের কন্ট্রলারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। মাইনুল হোসেনের দাদা ছিলেন প্রখ্যাত কবি সৈয়দ এমদাদ আলী, নানা ছিলেন আরেক প্রখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফা, মামা দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ভাগিনা সায়েন্টিফিক বিষয়ে অস্কার বিজয়ী নাফিস বিন জাফর। তিন ভাইবোনের মধ্যে মাইনুল হোসেন ছিলেন সবার বড়। বোন সৈয়দা নাফিসা জাফর, সবার ছোট ভাই সৈয়দ মেহেদী হোসেন।


শিক্ষাজীবন:
সৈয়দ মাইনুল হোসেনের শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত উইলস্ লিট্ল ফ্লাওয়ার স্কুলে। সেখানে দুই বছর পড়ার পর বাবার চাকুরির বদলীসূত্রে ফরিদপুরে যান এবং সেখানে ব্যাপিষ্ট মিশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন/এস,এস,সি এবং ১৯৬৯ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে। ১৯৭৬ সালে মাইনুল হোসেন ১ম শ্রেণিতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন:
ঊঅঐ ঈড়হংঁষঃধহঃ খঃফ. নামের একটি প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র স্থপতি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এর কয়েক মাস পর তিনি বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে যোগ দেন। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের নক্শা প্রণয়ন:
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম বন্ধ হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রামের বাড়ি ম্ন্সুীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ির দামপাড়া গ্রামে অবস্থান করেন। যুদ্ধে অংশ না নিলেও খুব কাছ থেকে যুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের বীরত্ব দেখেন। ত্রিশলক্ষ শহীদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় সবুজ মাতৃভুমি। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ঢাকার শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে জায়গা বরাদ্দ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যাগ গ্রহণ করেন এবং নক্শা আহবান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা তথা স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর তীব্র আকাঙ্খা অনুভব করেন এবং নক্শা আহবানকে নিজের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে মনে করেন। দেশের প্রথিতযশা ১৭-১৮ জন স্থপতির সাথে সৈয়দ মাইনুল হোসেন হৃদয় দিয়ে অঙ্কিত নক্শা জমা দেন। মোট নক্শা জমা পড়ে ৫৭টি। সবাইকে পেছনে ফেলে ২৭ বছরের তরুণ স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের নক্শা গৃহীত হয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের তাৎপর্য :
স্মৃতিসৌধ সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও সাফল্যের যুগলবন্দি রচনা করেছে। সাতটি ত্রিভুজ আকৃতি মিনারের শিখর বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি এক একটি ভাবব্যঞ্জনা প্রকাশ পাচ্ছে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি সূচিত হয় ৫২’র মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬’র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান এবং ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে নির্মিত হয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধটি। এছাড়া সাতটি স্তম্ভের সাথে সংখ্যা ‘৭’ এর একটি যোগসূত্র আছে। যেমন: ৫২’র ভাষা আন্দোলন ৫+২=৭, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ১+৬=৭, বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তর সংখ্যা ৭, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সংগত আন্দোলনের সংখ্যা ৭। অনেকে আবার সাতটি মিনারকে সূর্য্যরে সাতটি রংয়ের বিচ্ছুরণের সাথে তুলনা করে থাকেন। সৈয়দ মাইনুল হোসেনের মূল নক্শায় সাতটি মিনারের পার্শ্বদেয়ালে সাদা মার্বেল পাথর এবং মূল মিনারের বুকের মাঝ বরাবর কালো মার্বেল পাথর স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ ছিল, যাতে করে দিনের আলোয় প্রতিবিম্ব এবং রাত ও স্বল্প আলোয় আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের মিনারের উচ্চতা ৪৫ মিটার (১৫০ ফুট) এবং একটি বিন্দুতে অবস্থিত। স্মৃতিস্তম্ভ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর)। এ ছাড়াও রয়েছে একে পরিবেষ্টনকারী আরও ১০ হেক্টর (২৪ একর) এলাকাজুড়ে রয়েছে সবুজ বৃক্ষরাজি। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং মনোরম বাগান। ১৯৭৯ সালে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯৮২ সালের বিজয় দিবসের অল্প পূর্বে সমাপ্ত হয়। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণ সমাধি। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অর্ভ্যথনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড ও ক্যাফেটেরিয়া। আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

উল্লেখযোগ্য নক্শা:
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরের কর্মজীবনে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রায় ৩৮টি বড় স্থাপনার নকশা করেন। তাঁর নকশাকৃত স্থাপনার মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছাড়াও রয়েছে জাতীয় যাদুঘর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম ইপিজেড, আইআরডিপি ভবন কাওরানবাজার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন অন্যতম।

ব্যক্তিজীবন এবং কর্মবিমুখতা:
সৈয়দ মাইনুল হোসেন বিয়ে করেন ১৯৮২ সালে। বিয়ের ছয়মাস পর থেকে স্ত্রীর চাহিদানুযায়ী সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বসবাস শরু করেন। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর নেতিবাচক আচরণ বেশ ভাবিয়ে তোলে দেশসেরা স্থপতিকে। কোনভাবেই সংসারের শান্তি চিরস্থায়ী করতে পারেন না। স্ত্রী ১৯৯১ সালে মাঝামাঝির দিকে স্বামী সৈয়দ মাইনুল হোসেনকে ত্যাগ করে চলে যায় এবং দুই সৈয়দা তাহরিমা হোসেন ও সৈয়দা তানজিনা হোসেনকে নিয়ে স্ত্রী আলাদা বাসায় বাস করতে থাকে। বিষয়টি কোনভাবেই কোমল মনের অধিকারী স্থপতি মাইনুল মানতে পারেননি। ঔরসজাত সন্তানদের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। অস্থির হৃদয়ে মেয়েদের মুখ দেখার জন্য একাধিকবার সাবেক স্ত্রীর বাসায় গেলেও মেয়েদের সাক্ষাত পাননি বরং তাঁর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে পরিবারের কাছে এমন প্রাপ্যতা সহ্য করতে পারেননি সফল স্থপতি অনন্য কীর্তি গড়ার কারিগর মাইনুল হোসেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। হৃদয়ের গভীরে লুকানো কষ্ট প্রকাশ করতে না পেরে এক প্রকার উদাসীন হয়ে পড়েন এবং আস্তে আস্তে স্বীয়কর্মের প্রতি অনীহা প্রদর্শন করতে থাকেন। ১৯৯৮ সালের পর থেকে মনের অজান্তে ধীরে ধীরে কর্মবিমুখ হতে থাকেন। ২০০৬ সালে পুরোপুরিভাবে দৃষ্টিনন্দন ও সৃষ্টিশীল কাজ থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন। বাস করতে থাকেন শান্তিনগরের পৈত্রিক বাড়িতে। বৃদ্ধা মায়ের সাথে গল্প করে, পত্রিকা, বই পড়ে, টিভি দেখে সময় পার করতে থাকেন। এসময় আনন্দের সঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয় ছোট ভাই সৈয়দ মেহেদী হোসেনের ছোট মেয়ে চার বছর বয়সী মাহদিয়া। ছোট্ট ভাতিজির আবদার মেটাতে ব্যস্ত থাকতেন সারাক্ষণ।

স্বীকৃতি:
১৯৮৮ সালে গুণী স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনকে তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার একুশে পদকে ভূষিত করেন। এ ছাড়া ২০০০ সালে বেস সিলভার জুবীলী পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে শেলটেক পদক লাভ করেন।

মৃত্যু:
১০ নভেম্বর ২০১৪, সোমবার ৬৩ বছর বয়সে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন ইন্তেকাল করেন। রেখে যান দেশ তথা জাতির জন্য বেশকিছু অনন্য কীর্তি। জাতীয় স্মৃতিসৌধের এই মহান স্থপতি চিরনিদ্রায় শায়িত হন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।

বৃদ্ধা মায়ের স্মৃতিতে তারেক:
সৈয়দ মাইনুল হোসেনের ডাক নাম ছিল ‘তারেক’। মা-বাবার কাছে প্রথম সন্তান তারেক ছিল সবচেয়ে আদরের। শিক্ষার হাতেখড়ি হয় মায়ের কাছেই। ছোট বেলা থেকেই তারেকের ছিল ছবি আঁকার প্রতি ছিল প্রচন্ড ঝোঁক। পড়াশোনার পাশাপাশি সময় পেলেই রং পেন্সিল নিয়ে বসত। ছবির বিষয়বস্তু থাকতো প্রকৃতি, শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, গরুর গাড়ি, নদী, ফসলি জমি ইত্যাদি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় কাগজ কেটে জোড়া লাগিয়ে বিভিন্ন ছবি এঁকে সিনেমার ট্রেলর বানাতো এবং বন্ধুদের নিয়ে মজা করে দেখতো। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে ছবি এঁকে জীবনের প্রথম পুরস্কার পায়। কারও কাছে চিঠি লিখলে চিঠির উল্টো পৃষ্ঠায় সুন্দর ছবি এঁকে দিত। ছোটবেলা থেকে তারেক ছিল অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। কোনদিন উচ্চস্বরে কথা বলেনি। পড়ার প্রতি ছিল অসম্ভব মনোযোগী। যে কারণে স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার কাছেই ছিল আদরের। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছাত্রাবস্থায়ই। সে লক্ষ্য নিয়ে চালিয়ে যায় পড়াশোনা। মায়ের রান্নাকরা পোলাও মাংস ছিল পছন্দের খাবারের তালিকার শীর্ষে। কোনদিন কখনও কোন চাহিদার কথা বলেনি মা-বাবাকে। পাঞ্জাবি পড়তে ভালবাসতো। অবসর পেলেই নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতো। ছোট বোন-ভাইয়ের প্রতি ছিল যতœশীল। জীবনে কখনো কোন বিষয়ে মন খারাপ করেনি। শুধু ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারেককে দাওয়াত না দেয়ায় সামান্য মন খারাপ করেছিল, তবে মনের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয়নি। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, উচ্চস্বরে কথা বলা একদমই পছন্দ করতো না । জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত মা আর ভাতিজির সঙ্গেই সময় কাটাতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করতো। বড় সন্তান সৈয়দ মাইনুল হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে করতে এক সময় শব্দহীন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা। কন্ঠরোধ হয়ে আসে। হয়ত আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের আগে সন্তানের চলে যাওয়া কোনভাবেই মানতে পারছেন না। বোবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তারেকের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তীতে সরকার থেকে যথাযথ সম্মান না জানানোয় কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৮১ বছর বয়স্কা মহিয়সী মা। বর্তমানে ছোট্ট মাহদিয়া ঘরময় খুঁজে বেড়ায় চাচাকে আর সন্তানের নাজাতের প্রার্থনায় ব্যস্ত থাকেন মা রাশিদা হক।

No comments:

Post a Comment