Wednesday, December 31, 2014

স্বদেশের স্বপ্ন

সমস্ত মনোযোগ নিয়ে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাচ্ছে স্বদেশ। গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ¯্রােতধারা। পৃথিবীর সকল দেশের, সকল ধর্মের, সকল গোত্রের, সকল বর্ণের মানুষই খুবই আপন, নিজ আত্মীয়ের মতো ভাবে স্বদেশ। কি নিজ ভুমির, কি দুনিয়ার অন্য যে কোনে প্রান্তের দেশের জনগণ। সকল মানুষই তো মানুষ। একই রক্ত, একই দৃষ্টিশক্তি, এক হাত-পা, শরীরের গঠন সবই তো এক। রঙের ক্ষেত্রে সাদা-কালো কোন বৈষম্য তৈরী করতে পারে না। স্বদেশ জানে, একজন শিশু যখন ভূমিষ্ট হয়, তখন সে আদম সন্তান হয়েই জন্মগ্রহণ করে। বড় হতে হতে শিশুটি জানতে পারে তার ধর্ম, বর্ণ সম্পর্কে। মানুষ যে ধর্মেরই হোক না কেন, মানবিক গুণাবলী অর্থাৎ যে গুণাবলির কারণে সে মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব সেসকল গুণাবলী সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই এক ও অভিন্ন। কেউ কারো সাথে অসদাচরণ করবে না, অন্যায় করবে না, কারো সম্পদ লুন্ঠন করবে না, অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে হত্যা করবে না, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতামুলক মনোভাব থাকবে সবার মাঝে। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও কেউ কখনো অন্য ধর্মের সাথে এসকল আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে। তবে কেন আজ ফিলিস্তিনিদের এমন দুর্দশা? কেন আজ জনারণ্যে ফেলা হচ্ছে বিমান থেকে প্রাণঘাতি বোমা? হত্যা করা হচ্ছে নিরহ শিশু সন্তানকে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের, মহিলাদের, সাধারণ খেটে খাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের? কিসের জন্য এমন বর্বরতা, কিসের নেশায় আজ মুসমানদের রক্ত পানে মত্ত ইসরাইলী বাহিনী? কোন বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে ইসরাইলীরা বুকের ধন নিজের নিষ্পাপ শিশুর লাশ তুলে দিচ্ছে মা-বাবার কোলে, নিরহ স্বামীকে হত্যা করে স্ত্রীকে করছে বিধবা, বৃদ্ধ পিতার কাঁধে তুলে দিচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা সন্তানের লাশ, সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে নির্মিত আবাসভুমিকে গোলার আঘাতে ধ্বংস করে দিচ্ছে? আহতদের চিকিৎসা দেবার স্থান হাসপাতালকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? ওরা কি সত্যিই কোন মানুষ, ওরা কি সত্যিই কোন মতকে বিশ্বাস করে? মনে হয় না।

ইসরাইলীরা আজ কোন মানব সমাজের বাসিন্দা না। যদি মানব সমাজের বাসিন্দাই হতো তাহলে এমন নির্বিচারে নিরহ মানুষকে হত্যা করতে পারতো না, শিশুর নিষ্পাপ পবিত্র রক্তের হোলিখেলার উন্মত্ততায় মেতে উঠতো না। স্বদেশ বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে, পৃথিবীর অন্যান্য প্রভাবশালী দেশের শাসকেরা যে ধর্মেরই হোক না কেন, যে হত্যাযজ্ঞ কোন ধর্মেই গ্রহণযোগ্য নয়, তা নিয়ে তাঁদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। নেই কোন কার্যকরি উদ্যোগ। অবস্থাটা এমন মনে হয়, যেন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করতে পারার মধ্যেই ইসলারইলীদের বীরত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। আর তা দেখে আত্বতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে মিত্র দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা।
আমেরিকা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্যসহ মিত্রদের টার্গেট শুধুমাত্র ফিলিস্তিনবাসী না বরং সারা দুনিয়ার মুসলমানেরা। তাঁরা মনে করছে ফিলিস্তিনী মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে পারলে পর্যায়ক্রমে অন্য দেশের মুসলমানদেরও নিশ্চিহ্ন করা যাবে। তাই তো তথাকথিত মোড়লখ্যাত রাষ্ট্রপ্রধানরা ভাবছেন, তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ আজ মুক্তিকামী ফিলিস্তিনীরা না বরং সমগ্র পৃথিবীর সকল মুসলমানেরা। স্বদেশ এবার একটু পিছনে ফিরে তাকায়। মুসলিম দেশের আধিপত্য নষ্ট করতে বা ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রের মাতব্বরি বরদাস্ত না করার কারণেই তো আফগানিস্তানকে নিজেদের দাসত্বে পরিণত করা হলো। মারাত্বক মারণাস্ত্রের মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে ধ্বংস করা হলো, সাদ্দামকে ঝুলানো হলো ফাঁসির কাষ্ঠে। লিবিয়ার লৌহ মানবখ্যাত জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে উচ্ছেদ করে নির্মমভাবে হত্যা করে সেদেশের সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হলো। আর এসব অপকর্ম বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হলো কিছু মোনাফেককে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে। কিন্তু কি পেয়েছে তাঁরা? কিছুই না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অন্যায় করে, জোর জবরদস্তি করে কখনো নিজেদের আধিপত্য চিরস্থায়ী করা যায় না। ফিলিস্তিনীদের নিজস্ব ভুমিতে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে জোর করে ইসরাইলীদের এনে বসবাসের জন্য জায়গা করে দিয়েছে, মুসলিম নিধনে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে এর ফল কখনো শুভ হতে পারে না। কারণ ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ ইসরাইলী চালাচ্ছে তা অন্যায়। ফিলিস্তিনীদের নিজস্ব আবাসস্থল থেকে তাঁদেরকেই উচ্ছেদের চেষ্টা। কিন্তু মুসলমানদের ইতিহাস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার ইতিহাস। ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পৃথিবীর কোন শক্তিকে নয় বরং এক আল্লাহর উপর অবিচল আস্থাই আজ ফিলিস্তিনীদের মুল শক্তি।
স্বদেশের বুকের মাঝে ব্যাথা শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিনীদের দু:খ দুর্দশায় নিজেকে সামলাতে পারছে না। সিয়াম সাধনার মাসে ইহুদীদের এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে ধিক্কার দেবার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে। বিধি বহি:র্ভূত অর্থাৎ অবৈধভাবে জন্ম নেয়া সন্তান যেমন সমাজে জারজ সন্তান হিসেবে গণ্য তেমনিভাবে পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরাইল জারজ দেশ হিসেবেই পরিচিত। সেজন্যই হয়ত ওদের পক্ষেই সম্ভব সভ্য পৃথিবীতে এমন অসভ্য আচরণ করা, নিলর্জ্জের মতো সামরিক আক্রমণ চালিয়ে নিরহ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত হত্যা করা। স্বদেশ লক্ষ্য করে, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সংস্থা জাতিসংঘও যেন দায়সারা গোছের বক্তব্য বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সেহরীর সময় বিমান আক্রমণ, ইফতারি সময় স্থল আক্রমণ, সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা-এর শেষ কোথায়?
হতাশাবাদীদের দলে স্বদেশ কখনো ছিল না, আজও নেই। স্বদেশ জানে মুসলমানদের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস। শত প্রতিকুলতার মাঝে কিভাবে ¯্রষ্টার উপর আস্থা রেখে নিজের অধিকার আদায় করতে হয়। সাদ্দাদ, নমরুদ, কেনান, ফেরাউনদের মত শাসকের পতন হয়েছে, সামান্য পাখির ঠোঁটের পাথর নিক্ষেপে ধ্বংস হয়েছে আব্রাহার হস্তিবাহিনী। দুর পরবাস থেকে আমরা ফিলিস্তিনীবাসীর জন্য কিছুই করতে পারছি না। দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের ধৈর্য্যধারণের শক্তি প্রদান করুন। ফিলিস্তিনীবাসীর রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে যত, শত্রুদের পরাজয়ও ঘনিয়ে আসবে তত। কারণ শত্রুর বিরুদ্ধে ধরবার মত যাঁদের কোন অস্ত্র নেই নেই, অজ¯্র মৃত্যুই তাঁদের স্বশ¯্র করে তোলে। আর তখনই বিজয় হয়ে উঠে অবস্বম্ভাবি। ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করে, মুসলমানদের হত্যা করে কোন জাতি, কোন দেশ কোনদিন নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারেনি, আজও ফিলিস্তিনী নিরস্ত্র মুসলমানদের হত্যা করে ইসরাইলীরাও পারবে না। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হবেই অবৈধভাবে জন্ম নেয়া জারজ দেশ ইসরাইল-স্বদেশের বিশ্বাস তার এ স্বপ্ন পূরণ হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ্।

No comments:

Post a Comment